খুঁজুন
রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

খালেদা জিয়ার আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:১০ এএম
খালেদা জিয়ার আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী বগুড়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুটিসহ সাতটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রার্থীরা সামাজিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন।

 

তবে খালেদা জিয়ার বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। স্থানীয় বিএনপি নেতারা ধরেই নিয়েছেন, আসন দুটিতে জিয়া পরিবারের সদস্যরাই প্রার্থী হবেন। এরপরও কোনো কোনো নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

 

বগুড়ার দুটি আসনে জামায়াতের ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীর শূরা সদস্য ও বগুড়া শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি গোলাম রব্বানী।

 

৫ এপ্রিল বগুড়া শহিদ টিটু মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী, সাথি ও সদস্যদের প্রীতি সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এ প্রার্থিতা ঘোষণা করেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়া-৬ (সদর) আসনটি মূলত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রার্থী হওয়ায় এটিকে ভিআইপি আসন বলা হয়ে থাকে। যদিও তিনি অধিকাংশবার সংসদে এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। প্রতিবার উপনির্বাচন হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৬টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ১০ বার, আওয়ামী লীগ তিনবার, জাতীয় পার্টি একবার, জামায়াতে ইসলামী একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন।

 

এছাড়া প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দায়িত্বশীল নেতারা নির্বাচন করে থাকেন। তাই এ আসনটিকেও ভিআইপি আসন বলা হয়। যদিও খালেদা জিয়া সংসদে এ আসনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। প্রতিবার উপনির্বাচন হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ১৫টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ১০ বার, আওয়ামী লীগ দুইবার, জাতীয় পার্টি দুইবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন।

 

অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ, তাদের শরিক জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে। কেউ কেউ গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি ও অন্যরা মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী জেলাজুড়ে পোস্টারিং করেছেন। তবে এসব দলের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

 

বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সবাই চান খালেদা জিয়া বিগত নির্বাচনের মতো এবারও প্রার্থী হোক। তাই কোনো নেতা এখানে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলতে চান না। এরপরও কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হলে অন্তত চারজন বিএনপির টিকিট চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম। যদিও তারা কেউ প্রার্থিতার ব্যাপারে মুখ খুলছেন না।

 

একই অবস্থা বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের। সেখানে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাই চান, তাদের নেত্রী বিগত দিনের মতো এখানে প্রার্থী হোক। কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হলে যেন তার ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপরও জিয়া পরিবারের বাইরে কাউকে প্রার্থী করা হলে যারা টিকিট চাইবেন, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন।

 

বগুড়া-৬ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে বগুড়াবাসীর সঙ্গে প্রথম কাতারে ছিলাম। সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে এলাকার উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রেখেছি। তিনি আশা করেন, ভোটাররা সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবেন। বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের প্রার্থী কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য গোলাম রব্বানী একক প্রার্থী। তিনি আশা করেন বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।

 

সদর আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, বগুড়া সদর আসনটি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। তিনি কোনো কারণে প্রার্থী না হলে এখানে দলীয় মনোনয়ন চাইব। ১৪ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাত বছর পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছি। বগুড়া পৌরসভার তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। পৌরসভার বর্ধিতকরণসহ নানা উন্নয়ন করেছি। বগুড়া সদর আসনে খালেদা জিয়ার প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছি। আশা করি, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রার্থী হতে পারলে নির্বাচিত হয়ে বগুড়ার উন্নয়নে তারেক রহমানের সহযোগী হিসাবে কাজ করব।

 

অপর প্রার্থী বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, তিনি চান খালেদা জিয়া বগুড়া সদর আসনে নির্বাচন করুন। উনি প্রার্থী না হলে বিকল্প চিন্তা করার মতো সময় এখনো আসেনি। সময় হলে তখন এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে।

 

বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বলেন, এ আসনটি জিয়া পরিবারের। এখানে কে প্রার্থী হবেন বা হবেন না, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রার্থী না হয়ে যদি নির্দেশ করেন তাহলে প্রার্থী হব।

 

খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া আসনে তিনবার উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছি। এলাকার উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছি। অপর প্রার্থী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, এ আসনটি জিয়া পরিবারের। সবাই চাই খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বা তাদের পরিবারের কেউ প্রার্থী হোক। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলাম।

 

গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান, গাবতলী পৌরসভার মেয়রসহ দীর্ঘ ২২ বছর স্থানীয় সরকারে ছিলাম। বিগত সরকারের রোষানলে পড়ে ২২৩টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়েছি। নির্যাতন ও কারাভোগ করেছি। জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী না হলে এবং আমাকে আদেশ করলে মনোনয়ন চাইব।

 

তবে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, এ দুটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের নিয়ে তারা মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাদের মতে, এসব আসনে খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে অন্য কোনো প্রার্থীর সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। জামায়াত নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা প্রার্থী যিনি হোন না কেন, তারা আসন্ন নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন।

জীবনের দর্পণ পরিবারের পক্ষ থেকে- ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা

সারা দেশে শনিবার উদযাপিত হচ্ছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা।

জীবনের দর্পণ পরিবারের পক্ষ থেকে- ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি হলো ঈদুল আজহা। যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং ত্যাগের মহিমায় সারা দেশে এবারের ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এটি কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের আদর্শে উদ্ভাসিত করে আসছে।

শনিবার সকালে সারা দেশের মুসল্লিরা নিজ নিজ এলাকার ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। খতিবরা খুতবায় কুরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা।

 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নতমানের বিশেষ খাবারপরিবেশন করা হচ্ছে।

 

ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কুরবানি করছেন। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।

 

স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। এদিন সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কুরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদিসম্পাদন করেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্বের বহু দেশে শুক্রবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।

 

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে উদযাপন করা হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কুরবানি করতে গিয়েছিলেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি ছিল একটি পরীক্ষা। তিনি পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

 

ইসলামে বর্ণিত আছে, কুরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে চোখ বাঁধা অবস্থায় তিনিইসমাইল (আ.)-কে জবেহ করেন। কিন্তু চোখ খুলে দেখেন, তার প্রিয় পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে একটি পশু কুরবানি হয়ে গেছে, যেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ছিল।

 

এ ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে কুরবানির বিধান এসেছে ইসলামে। সে অনুযায়ী সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পশু কুরবানি করা ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

 

ঈদের পরবর্তী দুদিন অর্থাৎ আগামী সোমবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কুরবানি করা যাবে। কুরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের মধ্যে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করতে হয় এবং এক ভাগ নিজের জন্য রাখা যায়।

 

এদিকে ঈদুল আজহার ছুটি ৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি উপভোগ করবেন।

 

এর আগে, গত ৬ মে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্বাহী আদেশে ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ঈদের আগে দুই শনিবার সরকারি অফিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

 

এবারের ঈদকে ঘিরে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদের ছুটিতে দেশের সব সিএনজি স্টেশন ও ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাত্রী হয়রানি বা ভোগান্তির অভিযোগ পেলেই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

চামড়া কিনতে তৈরি পোস্তা, সংরক্ষণে শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
চামড়া কিনতে তৈরি পোস্তা, সংরক্ষণে শঙ্কা

শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা। এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি।

কোরবানির পর এসব পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহল।

চামড়া সংরক্ষণের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেও সারাদেশে ১ লাখ টন লবণ সরবরাহ করা হবে।

 

যার মধ্যে বিনামূল্যে দেওয়া হবে ৩০ হাজার টন। প্রস্তুত রয়েছে পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার শতাধিক আড়তও।

 

চামড়ার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ঢাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০–৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫–৬০ টাকা।

 

তবুও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা অনেক বড় ব্যবসায়ীকে সরাসরি বিনিয়োগ থেকে বিরত রাখছে। ফলে চামড়া কেনা ও সংরক্ষণের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আগের বছরগুলোর তুলনায় চামড়ার প্রবাহও কমেছে পোস্তায়। যেখানে একসময় ঈদের তিনদিনে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহ হতো, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে দেড় থেকে ২ লাখে। তবে পুরো মাসজুড়েই চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ চলবে। ঈদের ১৫ দিন পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও চামড়া আসবে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।

 

শুক্রবার (৬ জুন) পোস্তা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ১০০টি আড়ত প্রস্তুত রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও লবণ মজুদের কাজ শেষ করেছেন আড়তদাররা। ঈদের দিন সকাল থেকেই শুরু হবে চামড়া সংগ্রহ, চলবে তৃতীয় দিন পর্যন্ত। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনবেন তারা।

 

চামড়া ছাড়ানোর ৪ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ না করলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সময়মতো সংরক্ষণে নজর দিচ্ছেন আড়তদাররা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভালো ব্যবসার আশা করছেন তারা। তবে বৃষ্টিপাত ও অতিরিক্ত গরমে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।

 

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, পোস্তার আড়তদাররা প্রস্তুত। পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে অনেক বড় ব্যবসায়ী চামড়া কিনবে না, অনেকেই আত্মগোপনে আছেন। ব্যাংকগুলো ঋণ সীমিত করে দিয়েছে, ফলে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকার চামড়ার দাম গড়ে ৫–৭ টাকা বাড়ালেও টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা চামড়ার গুণগত মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ বছর পোস্তায় প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ চামড়া সংরক্ষণ হতে পারে, যা আগে হতো আড়াই থেকে ৩ লাখ। এতে একটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

 

পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও সাবেক সভাপতি আফতাব খান বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। লবণ এবং শ্রমিক ঠিক করে রাখা হয়েছে। এবার ট্যানারি মালিকরা প্রায় ৮০ শতাংশ চামড়া সরাসরি কিনে নিচ্ছেন, পোস্তায় আসছে মাত্র ২০ শতাংশ। ঈদের তিনদিনে পোস্তায় আসে প্রায় ৩ লাখ কাঁচা চামড়া। সব মিলিয়ে ৩০–৩১ লাখ চামড়া সংরক্ষণ করা হয় এখানে।

 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ জানান, সব ট্যানারি প্রস্তুত রয়েছে। মোকাম ও আড়তে লবণ পৌঁছে গেছে। সরকার ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণ বিনামূল্যে দিয়েছে। তবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তে ট্যানারি মালিকরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তবুও আমরা মনে করি, এবছর সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বেচাকেনা গত বছরের চেয়ে ভালো হবে।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চামড়ার পানির দামে বিক্রির সুযোগ থাকছে না। সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে কেনাবেচা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মসজিদ-মাদরাসায় লবণ সরবরাহ, সিন্ডিকেট ভাঙতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি এবং স্থানীয় সংরক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিনামূল্যে লবণ, প্রশিক্ষণ, শ্রম ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে এবার যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি চীন ও ভিয়েতনামে রপ্তানির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে এবছর রাজধানীসহ ঢাকায় কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য (লবণ মিশ্রিত) সর্বনিম্ন ১৩৫০ টাকা এবং মফস্বলের গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। আর বর্গফুট হিসাবে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা।

 

অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। মূল্য বিশ্লেষণে গত বছরের তুলনায় আসন্ন কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২৭ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মূল্য গত বছরের তুলনায় দুই টাকা বেড়েছে।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এর মধ্যে ৫৬ লাখ গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজারের বেশি অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। ২০ লাখের বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।

 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়, যার ৬০ শতাংশই আসে কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরু, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগল, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষ এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

জুলাই ঘোষণাপত্র-সনদ বাস্তবায়ন হলে এপ্রিলে নির্বাচনে আপত্তি নেই এনসিপির

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
জুলাই ঘোষণাপত্র-সনদ বাস্তবায়ন হলে এপ্রিলে নির্বাচনে আপত্তি নেই এনসিপির

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ প্রতিশ্রুত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন হলে আগামী বছরের এপ্রিল মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তাতে আপত্তি থাকবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

 

শুক্রবার (৬ জুন) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির শীর্ষ নেতারা এ কথা বলেন।

 

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এনসিপি নেতারা জানান, সংস্কার, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের বাস্তবায়ন এবং শহীদদের হত্যার দৃশ্যমান বিচার সম্পন্ন হলে এই সময়কে তারা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবেন। তবে তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপির হয়ে কাজ করছে, যার ফলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

 

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণা আমরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এপ্রিলের নির্বাচনে এনসিপির কোনো আপত্তি থাকবে না।

 

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন হবে গণপরিষদের মাধ্যমে। তাই সংস্কার ও সরকার গঠনের ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের ঘোষণা যুগপৎভাবে গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন হিসেবেই দিতে হবে।

 

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। বর্তমান কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

 

দলটির আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল না। তবে আমরা বলেছিলাম, সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে তবেই নির্বাচন দিতে হবে। এখন নির্বাচনের তারিখ সামনে এনে সংস্কারের প্রশ্নটি উপেক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। বর্তমান কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

 

দলটির আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল না। তবে আমরা বলেছিলাম, সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে তবেই নির্বাচন দিতে হবে। এখন নির্বাচনের তারিখ সামনে এনে সংস্কারের প্রশ্নটি উপেক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচন কীভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। অথচ আমরা শুরু থেকেই গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি তুলে আসছি।

 

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে। এটি বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।