
যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারটিকে ভালো চোখে দেখছে না বিরোধী কংগ্রেস দলও। কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি কার্যকর সিদ্ধান্তের পর নরেন্দ্র মোদী সরকারকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে বিরোধী দলগুলো। এই সংঘাত থামাতে আমেরিকার নাক গলানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। কেন মার্কিন হস্তক্ষেপ মেনে নিলেন মোদী? এই প্রশ্নের পাশাপাশি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি নস্যাৎ করা আয়রন লেডি ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে কংগ্রেস। সামাজিক মাধ্যমে নেতারা বলছেন, এই সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর অভাব অনুভব করছে ভারত।
কংগ্রেসের অভিযোগ, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র মার্কিন মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি মোদী সরকার। অথচ আমেরিকার অঙ্গুলি হেলন নোয়াতে পারেনি ইন্দিরা গান্ধীকে। কিন্তু মোদী মাথা নোয়ালেন। গোটা দেশে আজ ইন্দিরার মতো দৃঢ় ঋজু ব্যক্তিত্বের বড় অভাব। সামাজিক মাধ্যমে কংগ্রেস লিখেছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, নৃশংসতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেরুদণ্ড সোজা আছে। যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি এবং সম্পদ রয়েছে। সেই সময় পেরিয়ে গিয়েছে যখন শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ হওয়ার দরুন ৩-৪ হাজার মাইল দূর থেকে কেউ ভারতীয়দের নির্দেশ দিত, তাদের ইচ্ছে চাপিয়ে দিত। ইন্দিরা গান্ধীর এই সাহসী অবস্থানকে বর্তমান সময়ের সাথে তুলনা করছে বিরোধীরা।
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও একই সুরে কথা বলেছেন। তার মতে, ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন নেত্রী। ১৯৭১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কথাও শোনেননি। পাশাপাশি ‘ইন্দিরা হোনা আসান নেহি হ্যায়’ বলেও মোদীকে কটাক্ষ করে লিখেছেন উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেত্রী আরাধনা মিশ্র মোনা।
গেল ১০ মে বিকেলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে ভারত। জম্মু-শ্রীনগরসহ বেশ কিছু এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন স্থানীয়রা। চলমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা মানতে নারাজ দেশটির বেশিরভাগ বিরোধী নেতাকর্মীরাই। উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে তারা বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যাপারে তৃতীয় কোনো দেশের নাক গলানোর সুযোগ থাকবে না বলেই জানতেন তারা। অথচ সেই নীতি এখন বদলে দিয়েছেন মোদী সরকার। এর প্রেক্ষিতেই বিরোধীরা জানতে চাইছে, ভারত কি এবার তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রতি উন্মুক্ত অবস্থান নিয়েছে? এমন সব প্রশ্ন উঠেছে বিরোধী নেতাকর্মীদের মধ্যে।
এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে এবং ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা নিয়ে আলোচনা চান লোকসভার বিরোধীদল নেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। সেই মর্মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও লিখেছেন তিনি। চিঠিতে রাহুলের দাবি, সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক। সেখানেই অপারেশন সিধুর এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চান রাহুল। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত সংকল্প দেখানোর সুযোগ তৈরিতে এই আহ্বান জানান তারা। রাহুল ছাড়াও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও একই অনুরোধ করেছেন নরেন্দ্র মোদীকে।