
তিন দফা দাবি আদায়ে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের ‘বুঝিয়ে ফেরত পাঠাতে’ গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
বুধবার রাত ১০টার পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় ছোঁড়া একটি বোতল মাহফুজ আলমের মাথায় আঘাত করে। এর কিছু আগে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে বলে তারা অভিযোগ করছিলেন উপদেষ্টার কাছে।
মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, “আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে নায্যতা দিলেন।”
বিব্রতকর এ ঘটনার মধ্যে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস দেননি। তবে সরকার তাদের দাবি বিবেচনা করছে বলে জানান।
সরকারের তরফে ‘নিশ্চিত আশ্বাস’ না পেয়ে রাত পৌনে ১টার দিকেও আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান করছিলেন।
আবাসন সংকট নিরসনসহ তিন দফা দাবি আদায়ে বুধবার পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও দপ্তর যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করে। পথে পথে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
দুপুরের দিকে অন্তত পাঁচ দফা ব্যারিকেড ও পুলিশের বাধা ভেঙে তাদের মিছিলটি কাকরাইল এলাকায় এলে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশের লাঠিচার্জে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়, ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেয় অন্তত ৩০ জন।
বিকাল ৪টায় ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসসের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমিন, প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজ্জামুল হক ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রাত ১০টার পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে কাকরাইলে আসেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে তাদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেন।
হ্যান্ডমাইকে মাহফুজ বলেন, “আমাদের কথা ছিল আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা হবে। আমার সঙ্গে গতকাল (মঙ্গলবার) মিটিংয়ের কথা ছিল, শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে মিটিংয়ের কথা আছে। এরমধ্যে রাস্তায় নেমে দাবি আদায় আপনাদের কাছে নায্য মনে হয়েছে, আপনারা করেছেন। এটা আপনাদের অধিকারও বটে। আন্দোলনে পুলিশের কিছু সদস্য…”
কথা শেষ করতে না করতেই শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে।
উপদেষ্টা বলতে থাকেন, “কথা শেষ করতে দিতে হবে।” এ সময়ই কেউ একজন বোতল ছুঁড়ে মারলে উপদেষ্টার মাথায় এসে লাগে।
এসময় মাহফুজ হাত নেড়ে বলেন, “আমি কথা বলব না।”
তার মাথায় আঘাত করা বোতলটিত অর্ধেকের কম পানি ছিল। আঘাতের পর নিজের মাথায় পানি ঢালতে দেখা যায় মাহফুজকে।
এরপর তিনি সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “আমি শুধু দুঃখ প্রকাশ করতে চাই এই কারণে এখানে অনেকেই আমাদের সাথে জুলাইয়ে আন্দোলন করেছেন। যারা জুলাইয়ে আমাদের সাথে আন্দোলন করেছেন তারা আমার ওপর হামলা করেননি, হামলা করেছেন তারাই যারা স্যাবোটাজ করতে চেয়েছেন। প্রথম থেকেই কথা ছিল গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে আমার সাথে তাদের মিটিং হবে, সেই মিটিং তারা করেননি। তারা শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে মিটিং করেননি। বরং তারা তাদের কাজটাকে নায্য মনে করেছেন, এখানে চলে এসেছেন।
“আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই আজকে থেকে যমুনামুখী রাজনীতি, চল চল যমুনায় চল এই মুভমেন্ট আমরা আর হতে দেব না। এক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হব, যথেষ্ঠ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এই কাজ করেছেন তারা ভুল করেছেন।
শিক্ষার্থীদের উচিৎ তাদেরকে আলাদা করে চিহ্নিত করে রাখা, তাদের শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে সরকারকে-প্রশাসনকে সহায়তা করা। কারণ দাবি যদি সঠিক হয়ে থাকে এর নায্যতা আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আপনাদের দাবি এবং আপনাদের ওপরে আজকে যে পুলিশের অবস্থান এটাকে আপনারা নায্যতা দিলেন আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে। এটা আপনাদের করা উচিৎ হয়নি।”
ঘটনার বর্ণনায় তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমার সাথে যেটা হয়েছে, আমি এখানে আসার পরে একটি অংশ যারা স্যাবোটাজ করার জন্য আন্দোলনে ঢোকে। তাদের নাম আজকে উল্লেখ করব না। মিডিয়ার দায়িত্ব, প্রশাসনের দায়িত্ব তাদের এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা। আমি বলব না। দেখবেন যে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে খুঁজে পাওয়া যাবে। একজন ব্যক্তির ওপর গত আট মাস ধরে তাদের যে হিংসা, তাদের যে হিংস্রতা অনলাইনে দেখা যায় তারা আজকে সেটা এখানে করেছেন।
“যদিও আজকে আমি দেখলাম শিক্ষকেরা তাদের কাছে অসহায়। শিক্ষকদের কোনো মোরাল অথরিটি তাদের ওপর নাই। এই বিষয়টা আমাকে দুঃখ দিয়েছে। তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব আমাদের ধৈর্য রাখতে হবে। আমি শুনেছি কয়েকজন শিক্ষকও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। শিক্ষার্থীদের বলব যেকোন ন্যায্য আন্দোলন
সরকার শুনতে, বসতে কথা বলতে রাজি আছে।“