ঘূর্ণিঝড় আসে কোথা থেকে? কেনই বা বারবার বাংলাদেশে?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট জীবনের দর্পণ
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫ । ১০:১৪ পিএম

ঘূর্ণিঝড় হলো উষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট এক ধরনের তীব্র বায়ুমণ্ডলীয় আলোড়ন, যার বিধ্বংসী ক্ষমতা রয়েছে। এটি তৈরি হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক কারণে।

 

প্রথমত, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে জলীয় বাষ্প উপরে উঠে মেঘ তৈরি করে, যা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত আদ্রতা বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের যোগান দেয়, যা ঘূর্ণিঝড় গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক। তৃতীয়ত, সমুদ্রপৃষ্ঠে উষ্ণতার কারণে হালকা বাতাস উপরে উঠে গিয়ে একটি নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি করে। এই নিম্নচাপই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র।

 

চতুর্থত, পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে সৃষ্ট করিওলিস প্রভাব ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণনে সহায়তা করে। উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় ঘড়ির কাটার বিপরীতে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে। বিষুবরেখার কাছাকাছি করিওলিস প্রভাব দুর্বল হওয়ায় সেখানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। পঞ্চমত, বায়ুমণ্ডলে উলম্ব বায়ুপ্রবাহের অনুপস্থিতি বা দুর্বলতা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

 

এইভাবে ঘূর্ণিঝড় একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় শক্তি সঞ্চয় করে—উষ্ণ জলীয় বাষ্প উপরে উঠে ঠান্ডা হয়ে ঘন হয়ে মেঘ তৈরি করে, যার ফলে সুপ্ত তাপ নির্গত হয়ে আশপাশের বাতাসকে আরও উষ্ণ করে তোলে এবং আরও উপরে উঠতে সহায়তা করে। এতে করে বাতাসের নিচ ও উপরমুখী প্রবাহের একটি ঘূর্ণন শুরু হয়, যার ফলে ঘূর্ণিঝড় ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর কেন্দ্রে তৈরি হয় একটি শান্ত ‘চোখ’, যার চারপাশে তীব্র বায়ুপ্রবাহ, বজ্রপাত ও ভারী বৃষ্টিপাত ঘটে।

 

অতীতে বাংলাদেশের উপর আঘাত হানা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলো

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতিবছরই উপকূলীয় এলাকাগুলো ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকে। অতীতে বেশ কয়েকটি বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় দেশজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে:

 

১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়: বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। এতে প্রায় ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার।

 

১৯৯১ সালের চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড়: এতে প্রাণ হারান প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৪০ কিমি।

 

২০০৭ সালের সিডর: সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়, ৩৪০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বাতাসের গতি ছিল ২৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা।

 

২০০৯ সালের আইলা: সুন্দরবন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা সৃষ্টি করে।

 

২০১৩ সালের মহাসেন: দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষতি ঘটায়।

 

২০২০ সালের আমফান: একটি সুপার সাইক্লোন হিসেবে উপকূলে আঘাত হানে। প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও, ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক।

প্রকাশক ও সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন

প্রিন্ট করুন