
ছয় দফা দাবি আদায়ে এবার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। আজ রবিবার দেশব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করবেন তারা। গতকাল শনিবার ‘রাইজ ইন রেড’ নামে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী।
কুমিল্লার কর্মসূচিতে ‘হামলার’ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে সারা দেশে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে গতকাল প্ল্যাকার্ড হাতে ‘রাইজ ইন রেড’ নামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ‘মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার’, ‘ডুয়েট যদি একটা হয়, ডিপ্লোমারা যাবে কই?’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, ‘ছয় দফা দাবি আদায়, কুমিল্লায় কর্মসূচিতে হামলা ও ফ্যাসিবাদী শক্তি যে আমাদের আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টা করছে—এর প্রতিবাদে এ কর্মসূচি।’
এর আগে শুক্রবার দুপুরে ছয় দফা দাবি আদায়ে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে মশাল মিছিল করেন। তার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেও সন্তুষ্ট না হয়ে ছয় দফা দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বুধবার সকাল থেকে ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তা সড়কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো—জুনিয়র ইন্সট্রাকটর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের প্রমোশনের হাই কোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর পদবি পরিবর্তন এবং ঐ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে স্থায়ীভাবে চাকুরিচ্যুত করা। ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাকটর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা, সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে নিয়োগ বাতিল করা এবং মামলার প্রধান কারিগর ক্রাফট ইন্সট্রাকটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা। উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) পদে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাশ করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না এবং এই পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা ছাত্রদের ন্যূনতম ১০ম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬ হাজার টাকা দেওয়া। কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব নিয়োগ দেওয়া। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সব নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সব শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা। ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাশ করতে হবে এবং বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।