
কাবা শরিফকে ‘বাইতুল্লাহ’, ‘আল-বাইতুল হারাম’, ‘আল-বাইতুল আতীক’ ও ‘কেবলা’ও বলা হয়। বিশ্ব ইতিহাসের প্রথম ইবাদতগাহ।
সর্বপ্রথম ফেরেশতারা কাবা শরীফ নির্মাণ করেন। তার পর যুগে যুগে এটির সংস্কার হতে থাকে। ফেরেশতাসহ এ পর্যন্ত নির্মাণ ও সংস্কার কর্মে ১২ জনের নাম তালিকাভূক্ত হয়েছে।
হাতিম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবূওয়াত লাভের পাঁচ বছর পূর্বে তথা তার ৩৫ বছর বয়স কালে কুরায়েশরা বন্যার তোড়ে ধ্বসে পড়ার উপক্রম বহু বছরের ‘ইবরাহিমি কাবা’কে ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ নির্মাণকালে তাদের হালাল উপার্জনের কমতি থাকায় তথা বাজেট সংকটের কারণে বাইতুল্লাহর উত্তর দিক থেকে প্রায় ৩ মিটার বাদ দিয়ে বাকী অংশটুকু নির্মাণ করে। বাইতুল্লাহর এই বাদ দেওয়া অংশটুকুকে বলা হয় ‘হাতিম’।
হাতিম শব্দের অর্থ খণ্ডিত অংশ। বাইতুল্লাহ থেকে এ অংশটুকু খণ্ডিত করে দেওয়া হয়েছে বিধায় এমন নামকরণ করা হয়েছে।
এ হাতিমকে একটি স্বল্প উচ্চ অর্ধ গোলাকার প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এ স্থানটি বাইতুল্লাহর অংশ বিধায় তাওয়াফের সময় তার বাইরে দিয়েই তাওয়াফ করতে হয়। তবে পুরো হাতিম বাইতুল্লাহর অংশ নয়; বরং বাইতুল্লাহ সংলগ্ন ৩ মিটার পরিমাণ স্থান বাইতুল্লাহর অংশ।
মীযাবে রহমত
কুরায়েশরা যখন বাইতুল্লাহ নির্মাণ করে, তখন তারাই সর্বপ্রথম বাইতুল্লাহয় ছাদ সংযোগ করে। এর আগে ছাদ ছিল না। এ ছাদ নির্মাণের সময় তারা ছাদের পানি সরানোর জন্য হাতিমের দিকে একটি পরনালা সংযোগ করে। এই পরনালাকেই বলা হয় ‘মীযাবে রহমত’।
কাবার গিলাফ
সর্বপ্রথম হযরত ইসমাঈল (আ.) কাবা শরীফে গিলাফ পরিধান করান। একটি ঐতিহাসিক বর্ণনামতে, ইয়ামানের বাদশাহ আসআদ হিময়ারী তুব্বা’ গিলাফের সূচনা করেন।
ইসলামী যুগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খলীফারা নিজ নিজ যুগে কাবা শরিফকে গিলাফ পরিধান করান।
সৌদি সরকার ১৩৯৭ হিজরি মোতাবেক ১৯৭৭ সালে এর জন্য একটা নতুন কারখানা স্থাপন করেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এ কারখানাতেই গিলাফ তৈরি করা হচ্ছে।
হজরে আসওয়াদ
হজরে আসওয়াদ মাতাফ থেকে ১.১০ মিটার উঁচুতে বাইতুল্লাহর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপিত একটি পাথর। পাথরটি জান্নাত থেকে আনা।
পাথরটি দুধের চেয়ে সাদা ছিল। বনী আদমের গুনাহ এটিকে কালো করে দিয়েছে। এই কালো হওয়ার কারণেই এটিকে হজরে আসওয়াদ বলা হয়। কারণ, আসওয়াদ শব্দের অর্থ কালো। বর্তমানে পাথরটিকে একটি রূপার ফ্রেমে এঁটে রাখা হয়েছে।
মাকামে ইবরাহিম
‘মাকামে ইবরাহিম’ একটি পাথরকে বলা হয়, যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহিম (আ.) বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন এবং দেয়াল গাঁথার সময় প্রয়োজনে অলৌকিকভাবে পাথরটি আপনা আপনি উঁচু-নিচু হত। হজরে আসওয়াদের ন্যায় এ পাথরটিও জান্নাত থেকে আসে।
পাথরটি হলুদ লালের মাঝে সাদাটে রংয়ের। পাথরটি প্রায় চতুর্কোণ বিশিষ্ট। ২০ সেন্টিমিটার উঁচু। বর্তমানে পাথরটি কাবা শরীফ থেকে প্রায় ১৩.৫০ মিটার পূর্বে একটি পিতলের জালির মধ্যে রাখা অবস্থায় রয়েছে।
জমজম
‘জমজম’ হল আল্লাহর সৃষ্ট একটি অলৌকিক কুয়ার নাম, যা তৃষ্ণার্থ শিশু ইসমাঈল ও তার মা হাজেরার জন্য সৃষ্ট হয়। ১৮ ফুট দৈর্ঘ, ১৪ ফুট প্রস্থ ও অন্যূন ৫ ফুট গভীরতার এ ছোট্র কুয়াটি পৃথিবীর অত্যাশ্চর্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
বিগত প্রায় চার হাজার বছরের অধিককাল ধরে এই কুয়া থেকে দৈনিক হাজার গ্যালন পানি মানুষ পান করছে ও সুস্থতা লাভ করছে। কিন্তু কখনই পানি কম হতে দেখা যায়নি বা নষ্ট হয়নি। এতে যেমন পানীয় আছে, তেমনি খাদ্যও আছে। আবার এতে সকল রোগের নিরাময়ও রয়েছে। বর্তমানে এ কুয়াটি মাতাফের অভ্যন্তরে অবস্থিত আছে।
মাতাফ
‘মাতাফ’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে কাবা শরীফের চতুর্দিকস্থ খোলা আঙিনা, যেখানে তাওয়াফের চক্কর লাগানো হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) সর্বপ্রথম মাতাফকে পাকা করেন।
সর্বশেষে সৌদি সরকার তাদের নিজস্ব কারখানায় তৈরিকৃত এমন সাদা মার্বেল পাথর মাতাফে স্থাপন করেন, যা প্রচণ্ড রোদের তাপ সইতে পারে এবং সর্বদাই ঠাণ্ডা থাকে। ফলে তাতে খালি পায়েও তাওয়াফ করা যায়।
মসজিদে হারাম
‘মসজিদে হারাম’ বলে বোঝানো হচ্ছে কাবা শফিফের চতুর্দিকস্থ মসজিদকে। এই মসজিদ শুরু থেকে ছিল না। হযরত আবু বকর (রা.)-এর যুগ পর্যন্ত বাইতুল্লাহর চতুর্দিকে ঘোরানো এই মসজিদে হারাম ছিল না। চতুর্দিকে ছিল বসতবাড়ি।
হযরত উমর (রা.)-এর যুগে মুসল্লিদের স্থান সংকুলানের অভাব বোধ হওয়ায় তিনি আশপাশের বাড়িঘর ক্রয় করে তাতে মসজিদে হারাম নির্মাণ করেন। কালে তাতে বহু সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ হয়। বর্তমানে এ মসজিদে হারামে ভিড়ের সময় একসঙ্গে দশ লাখের চেয়ে বেশী মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
সাফা ও মারওয়া
‘সাফা ও মারওয়া’ দু‘টি পৃথক পৃথক ছোট্ট পাহাড়। কাবা গৃহের পূর্ব-দক্ষিণে ‘সাফা পাহাড়’ অবস্থিত। সেখান থেকে সোজা উত্তর দিকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার (৪৫০ মিটার) দূরে ‘মারওয়া পাহাড়’ অবস্থিত।
উভয় পাহাড়ে সাতবার সায়ীতে ৩.১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে হযরত হাজেরা (আ.)-এর দৌঁড়ানোর কাহিনী খুবই প্রসিদ্ধ।