খুঁজুন
রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

নতুন করে ‘অতি দরিদ্র’ হবে আরও ৩০ লাখ মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৬:০২ পিএম
নতুন করে ‘অতি দরিদ্র’ হবে আরও ৩০ লাখ মানুষ

মূল্যস্ফীতির প্রভাব বেশি হলেও তা মোকাবিলায় আসন্ন বাজেটে (২০২৫-২৬) ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র উদ্যোগ থাকছে সীমিত। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তুলনায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমছে ৪ লাখ ২ হাজার। সেখানে এই কর্মসূচিতে নতুন করে যোগ হয়েছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার সুবিধাভোগী। যা আগামী অর্থবছরে যোগ হচ্ছে ৬ লাখ ২৪ হাজার। অথচ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে গত ২ বছরে দেশে অতি দরিদ্র হয়েছে ৩৮ লাখ মানুষ। আর শিগগিরই মূল্যস্ফীতির পারদ কমছে না বিশ্বব্যাংক এমন আভাস দিয়ে বলেছে নতুন করে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অতি দরিদ্রের বড় একটি অংশ এই কর্মসূচির আওতার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

 

এছাড়া আসন্ন বাজেটে (২০২৫-২৬) সব ধরনের ভাতা সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ একশ টাকা বেড়ে ভাতার অঙ্ক (৬৫০-৯০০) টাকায় উন্নীত করেছে, যা দিয়ে দারিদ্র্যবিমোচন খুবই কঠিন। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সংখ্যা কমানো হচ্ছে।

 

সম্প্রতি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে উল্লিখিত সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ এ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

 

ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বাজেটে ১২ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে মেটাতে বরাদ্দ থাকছে ১৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে ১৭ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন অর্থবছরে এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বাড়ছে।

 

এদিকে অব্যাহত মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) গবেষণা তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৭৮ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার মধ্যে ৩৮ লাখ লোক অতি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। আর ৯৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ অতিমাত্রায় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা এবং ভাতার অঙ্ক বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিদিরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, অর্থ সংকটের কারণে বড় ধরনের উদ্যোগ থাকছে না সরকারের পক্ষ থেকে।

 

এদিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ঘিরে দুর্নীতি, অপচয় প্রতিরোধ ও প্রকৃত সুবিধাভোগী শনাক্ত করার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্তর্বর্তী সরকারের বলয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও এ খাত ঘিরে দুর্নীতির বিষয়টি প্রথমে আলোচনায় নিয়ে আসেন সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নিজেই। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘শুধু অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সফল হবে না। সামাজিক সুরক্ষা খাতে দুর্নীতি বড় বাধা, ফলে শক্তিশালী তদারকি প্রয়োজন। এ খাতে উপকারভোগীদের তালিকায় দুর্নীতি আছে। ড্যাশবোর্ড তৈরি হলে সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচিগুলোর কার্যক্রম জোরালো নজরদারির মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।

 

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৩৩ লাখ বয়স্ক ও ২৫ লাখ বিধবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা ভাতা পাওয়ার অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। এতে করে তাদের পেছনে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ বয়স্ক ও বিধবাকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব। জানতে চাইলে সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভিত্তি, প্রার্থী ও স্থায়ীত্ব পূর্ণ বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের সক্ষমতা থাকলে এ কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো দরকার। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে গত কয়েক বছরে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমছে। অনেকে দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছে, দারিদ্র্য মানুষগুলো অতি দরিদ্র হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে মূল্যস্ফীতির কারণে ৩০ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে।

 

সূত্রমতে, আসন্ন বাজেটে নতুন করে ৬ লাখ ২৪ হাজার জনকে বিভিন্ন ভাতার অওতায় আনা হচ্ছে। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আসবেন ১০ লাখ ২৬ হাজার জন।

 

ফলে ওই হিসাবে আগামী অর্থবছরে কমছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনী। অর্থ বিভাগের হিসাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৯৯ হাজার জনকে যুক্ত করে আগামী বাজেটে ৬১ লাখ বৃদ্ধকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে। এতে বরাদ্দ থাকছে চার হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা, চলতি বাজেটে বরাদ্দ আছে চার হাজার ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এ কর্মসূচিতে ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

কেরানীগঞ্জের মধ্যচরের বাসিন্দা বয়স্ক ভাতাভোগী আব্দুল মান্নান যুগান্তরকে জানান, ৩ মাস অন্তর মোবাইলে এক হাজার ৮শ টাকা ভাতা পাচ্ছি। এ ভাতা দিয়ে সামান্য উপকারে আসে। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে তিনি মনে করেন ভাতার অঙ্ক বাড়ানো হলে সেটি তাদের জীবনমান উন্নয়নে আরও কাজে দেবে।

 

 

 

এদিকে বিধবা ভাতাভোগীতে নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার জন। এতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বেড়ে ২৯ লাখে উন্নীত হবে। অর্থ বরাদ্দ থাকছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৮৪৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তবে ভাতার অঙ্ক একশ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে।

 

প্রতিবন্ধী ভাতার কার্যক্রমও বাড়ছে। উপকারভোগী ৩২ লাখ ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ৩৪ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। ভাতার অঙ্ক ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তিন হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে এ খাতে তিন হাজার ৩২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে।

 

সূত্রমতে, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজে দরিদ্র মাকে ভাতা দেওয়া হয়। আগামী অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২০ জনকে নতুন করে যুক্ত করা হবে

। এতে মোট উপকারভোগীর

 

 

 

 

 

 

 

জীবনের দর্পণ পরিবারের পক্ষ থেকে- ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা

সারা দেশে শনিবার উদযাপিত হচ্ছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা।

জীবনের দর্পণ পরিবারের পক্ষ থেকে- ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি হলো ঈদুল আজহা। যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং ত্যাগের মহিমায় সারা দেশে এবারের ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এটি কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের আদর্শে উদ্ভাসিত করে আসছে।

শনিবার সকালে সারা দেশের মুসল্লিরা নিজ নিজ এলাকার ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। খতিবরা খুতবায় কুরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা।

 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নতমানের বিশেষ খাবারপরিবেশন করা হচ্ছে।

 

ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কুরবানি করছেন। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।

 

স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। এদিন সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কুরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদিসম্পাদন করেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্বের বহু দেশে শুক্রবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।

 

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে উদযাপন করা হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কুরবানি করতে গিয়েছিলেন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি ছিল একটি পরীক্ষা। তিনি পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

 

ইসলামে বর্ণিত আছে, কুরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে চোখ বাঁধা অবস্থায় তিনিইসমাইল (আ.)-কে জবেহ করেন। কিন্তু চোখ খুলে দেখেন, তার প্রিয় পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে একটি পশু কুরবানি হয়ে গেছে, যেটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ছিল।

 

এ ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে কুরবানির বিধান এসেছে ইসলামে। সে অনুযায়ী সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পশু কুরবানি করা ওয়াজিব বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

 

ঈদের পরবর্তী দুদিন অর্থাৎ আগামী সোমবার আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত কুরবানি করা যাবে। কুরবানির পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের মধ্যে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করতে হয় এবং এক ভাগ নিজের জন্য রাখা যায়।

 

এদিকে ঈদুল আজহার ছুটি ৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি উপভোগ করবেন।

 

এর আগে, গত ৬ মে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নির্বাহী আদেশে ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ঈদের আগে দুই শনিবার সরকারি অফিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

 

এবারের ঈদকে ঘিরে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদের ছুটিতে দেশের সব সিএনজি স্টেশন ও ফিলিং স্টেশন খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাত্রী হয়রানি বা ভোগান্তির অভিযোগ পেলেই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

চামড়া কিনতে তৈরি পোস্তা, সংরক্ষণে শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
চামড়া কিনতে তৈরি পোস্তা, সংরক্ষণে শঙ্কা

শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা। এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি।

কোরবানির পর এসব পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহল।

চামড়া সংরক্ষণের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেও সারাদেশে ১ লাখ টন লবণ সরবরাহ করা হবে।

 

যার মধ্যে বিনামূল্যে দেওয়া হবে ৩০ হাজার টন। প্রস্তুত রয়েছে পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার শতাধিক আড়তও।

 

চামড়ার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ঢাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০–৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫–৬০ টাকা।

 

তবুও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা অনেক বড় ব্যবসায়ীকে সরাসরি বিনিয়োগ থেকে বিরত রাখছে। ফলে চামড়া কেনা ও সংরক্ষণের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আগের বছরগুলোর তুলনায় চামড়ার প্রবাহও কমেছে পোস্তায়। যেখানে একসময় ঈদের তিনদিনে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহ হতো, সেখানে এখন তা নেমে এসেছে দেড় থেকে ২ লাখে। তবে পুরো মাসজুড়েই চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ চলবে। ঈদের ১৫ দিন পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও চামড়া আসবে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।

 

শুক্রবার (৬ জুন) পোস্তা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ১০০টি আড়ত প্রস্তুত রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও লবণ মজুদের কাজ শেষ করেছেন আড়তদাররা। ঈদের দিন সকাল থেকেই শুরু হবে চামড়া সংগ্রহ, চলবে তৃতীয় দিন পর্যন্ত। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনবেন তারা।

 

চামড়া ছাড়ানোর ৪ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ না করলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সময়মতো সংরক্ষণে নজর দিচ্ছেন আড়তদাররা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভালো ব্যবসার আশা করছেন তারা। তবে বৃষ্টিপাত ও অতিরিক্ত গরমে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।

 

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, পোস্তার আড়তদাররা প্রস্তুত। পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে অনেক বড় ব্যবসায়ী চামড়া কিনবে না, অনেকেই আত্মগোপনে আছেন। ব্যাংকগুলো ঋণ সীমিত করে দিয়েছে, ফলে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকার চামড়ার দাম গড়ে ৫–৭ টাকা বাড়ালেও টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা চামড়ার গুণগত মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এ বছর পোস্তায় প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ চামড়া সংরক্ষণ হতে পারে, যা আগে হতো আড়াই থেকে ৩ লাখ। এতে একটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

 

পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও সাবেক সভাপতি আফতাব খান বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। লবণ এবং শ্রমিক ঠিক করে রাখা হয়েছে। এবার ট্যানারি মালিকরা প্রায় ৮০ শতাংশ চামড়া সরাসরি কিনে নিচ্ছেন, পোস্তায় আসছে মাত্র ২০ শতাংশ। ঈদের তিনদিনে পোস্তায় আসে প্রায় ৩ লাখ কাঁচা চামড়া। সব মিলিয়ে ৩০–৩১ লাখ চামড়া সংরক্ষণ করা হয় এখানে।

 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ জানান, সব ট্যানারি প্রস্তুত রয়েছে। মোকাম ও আড়তে লবণ পৌঁছে গেছে। সরকার ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণ বিনামূল্যে দিয়েছে। তবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তে ট্যানারি মালিকরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তবুও আমরা মনে করি, এবছর সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বেচাকেনা গত বছরের চেয়ে ভালো হবে।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চামড়ার পানির দামে বিক্রির সুযোগ থাকছে না। সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে কেনাবেচা করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মসজিদ-মাদরাসায় লবণ সরবরাহ, সিন্ডিকেট ভাঙতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি এবং স্থানীয় সংরক্ষণে জোর দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিনামূল্যে লবণ, প্রশিক্ষণ, শ্রম ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে এবার যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি চীন ও ভিয়েতনামে রপ্তানির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে এবছর রাজধানীসহ ঢাকায় কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য (লবণ মিশ্রিত) সর্বনিম্ন ১৩৫০ টাকা এবং মফস্বলের গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। আর বর্গফুট হিসাবে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা।

 

অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। মূল্য বিশ্লেষণে গত বছরের তুলনায় আসন্ন কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২৭ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মূল্য গত বছরের তুলনায় দুই টাকা বেড়েছে।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এর মধ্যে ৫৬ লাখ গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজারের বেশি অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। ২০ লাখের বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।

 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়, যার ৬০ শতাংশই আসে কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরু, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগল, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষ এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

জুলাই ঘোষণাপত্র-সনদ বাস্তবায়ন হলে এপ্রিলে নির্বাচনে আপত্তি নেই এনসিপির

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
জুলাই ঘোষণাপত্র-সনদ বাস্তবায়ন হলে এপ্রিলে নির্বাচনে আপত্তি নেই এনসিপির

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ প্রতিশ্রুত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন হলে আগামী বছরের এপ্রিল মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তাতে আপত্তি থাকবে না বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

 

শুক্রবার (৬ জুন) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির শীর্ষ নেতারা এ কথা বলেন।

 

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এনসিপি নেতারা জানান, সংস্কার, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের বাস্তবায়ন এবং শহীদদের হত্যার দৃশ্যমান বিচার সম্পন্ন হলে এই সময়কে তারা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবেন। তবে তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপির হয়ে কাজ করছে, যার ফলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

 

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণা আমরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এপ্রিলের নির্বাচনে এনসিপির কোনো আপত্তি থাকবে না।

 

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন হবে গণপরিষদের মাধ্যমে। তাই সংস্কার ও সরকার গঠনের ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের ঘোষণা যুগপৎভাবে গণপরিষদ ও আইনসভার নির্বাচন হিসেবেই দিতে হবে।

 

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। বর্তমান কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

 

দলটির আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল না। তবে আমরা বলেছিলাম, সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে তবেই নির্বাচন দিতে হবে। এখন নির্বাচনের তারিখ সামনে এনে সংস্কারের প্রশ্নটি উপেক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। বর্তমান কমিশন তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।

 

দলটির আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে আমাদের আপত্তি ছিল না। তবে আমরা বলেছিলাম, সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে তবেই নির্বাচন দিতে হবে। এখন নির্বাচনের তারিখ সামনে এনে সংস্কারের প্রশ্নটি উপেক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচন কীভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। অথচ আমরা শুরু থেকেই গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়টি তুলে আসছি।

 

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন পক্ষপাতদুষ্টভাবে কাজ করছে। এটি বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।